Table of Contents
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন। প্রতিদিনের মত আজকে আমি আরেকটি বিষয় দুধের উপকারিতা নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকের পোস্টটিতে থাকছে দুধ খাওয়ার ১০ উপকারিতা। সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়ার উপকারিতা। ছাগলের দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও সয়া দুধের উপকারিতা। সেই সাথে শাল দুধের উপকারিতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি।
বন্ধুরা আপনারা জানেন, দুধ একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। দুধের একটি অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ থাকে। যা দেহের দৈহিক গঠন মেধা বিকাশ ও শক্তি বৃদ্ধিতে অপরিহার্য ভূমিকা হিসেবে পালন করে।
দুধের উপকারিতা
এমন একটি পুষ্টিকর খাবার যার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে দুধের পুষ্টিগুণ ও দুধের উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
১। দুধে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল ও ভিটামিন থাকার ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে। যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং দেহের ত্বক মসৃণ ও সুন্দর করে তোলে।
২। দুধে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি থাকায় দাঁতের গঠন মজবুত ও শক্তিশালী করে। এতে দাঁত পোকা, ক্ষয় হওয়া হলুদ হওয়া ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করে। সাথে হাড় ক্ষয় রোধ করে হাড়ের বৃদ্ধিতে বিশাল ভূমিকা রাখে।
৩। দুধ জাতীয় এলার্জি সমস্যা না থাকলে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস করে দুধ পান করলে শরীরের কষ্টোকাঠিনো সমস্যার সমাধান হয়।
৪। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা মানবদেহের মাংসপেশির জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন ব্যায়ামের পাশাপাশি এক গ্লাস করে দুধ পান করলে মাংসপেশী ও সুঠাম হয় এবং শারীরিক গঠন সুন্দর হয়।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন রকমের দূরসম্পর্কের নিচে আলোচনা করা হলো আপনারা বিষয়টি দেখে নিতে পারেন।
সয়া দুধের উপকারিতা
প্রথমেই জেনে নেয়া যাক ছয়া দুধ কি। সয়াদুধ হলো এক ধরনের ফসল এর রস। এটি মূলত সয়াবিন নামক একটি ফলের রস। যা ভিজিয়ে ব্লেন্ডার করে জিপিএ বের করা হয়। মূলত যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে বিশেষ করে ল্যাকটোজ এর কারণে গরু অথবা ছাগলের দুধ খেলে পেটে জ্বালাপোড়া করে এবং সমস্যা হয় তাদের জন্য স্বাস্থ্যকর বিকল্প হল। এতে ল্যাকটোজ এর পরিমাণ কম থাকায় পেটের পীড়া এর মত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। বিদ্যমান ভিটামিন বি 12 দেহের শক্তি গঠনে সহায়তা করে এবং দেহকে ও শক্তিশালী করে তোলে। সয়া দুধ ক্যালসিয়াম ও আয়রন এর অন্যতম উৎস। যাদের শরীরে পানি এবং আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তারা নিয়মিত দুধ পান করতে পারেন।
ছাগলের দুধের উপকারিতা
মূলত অন্যান্য দুধের চেয়ে ছাগলের দুধের পুষ্টি গুনাগুন দ্বিগুণ হয়ে থাকে। ছাগলের দুধে আয়রন প্রোটিন গুড ফ্যাট ইত্যাদি পরিমাণমতো থাকায় একে একটি পোষ্টের পাওয়ার হাউজ বলা হয়। এতে থাকা আয়রন ও ক্যালসিয়াম মাংসপেশি এবং হাড়ের বৃদ্ধিতে বিশাল ভূমিকা রাখে যার কারণে বাড়ন্ত বয়সী বাচ্চাদের নিয়মিত দুধ পান করালে তারা দৈহিকভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ছাগলের দুধ তুলনামূলকভাবে কম মিষ্টি হয় এটা হজম হতে কোন সমস্যা হয়।
ছাগলের দুধ হার্ট ভালো রাখে।
এর পুষ্টিগুণ মায়ের দুধের কাছাকাছি।
ছাগলের দুধে এলার্জি প্রবণতা কম।
উচ্চ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এবং
ত্বকের বিশেষ উপকারী ।
নান দুধের উপকারিতা
মায়ের বুকের শাল দুধের পরিবর্তে অনেকেই নান বা কৌটা জাত দুধের দিকে ঝুকছে। তারা হয়তো জানেনা নান দুধের উপকারিতা বলতে তেমন কিছু নেই। আজ কাল ১দিন থেকে ৬ বছের বয়সী শিশুদেরও নান দুধ খাওয়ানো হয়ে থাকে। এতে ভিবিন্ন ধরনের ভাইরাস থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়। শরীরে ভাইরাস দেখা দেয়। তাই চিকিৎসকগণ সর্বদা নান দুধ খেতে নিরুৎসাহিত করেছেন। মুলত শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের বিকল্প বলে কিছু নেই।
গুড়া দুধের উপকারিতা
অনেকের মনেই গুড়ো দুধের উপকারিতা নিয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে। তবে বলে রাখা ভাল যে গুড়ো দুধ প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে ব্যাবহার হয়ে আসছে। এটি মুলত পাস্তুরায়ন এর মাধ্যমে তরল দুধকে তাপ প্রয়োগ করে গুড়া দুধ তৈরি করা হয়। আর গুড়ো দুধ প্রায় ১৮ মাস পর্যন্ত সংরক্ষন করা যায়। মুলত দীর্ঘদিন সংরক্ষণ ও বহন সুবিধার জন্য গুড়ো দুধ তৈরি করা হয়। গুড়ো দুধের ২১ ধরনের অ্যামিনো এসিড, ভিটামিন বি-৫, ভিটামিন বি-১২, মিনারেল, ফসফরাস ও কালসিয়াম ও রয়েছে। যা তরল দুধের উপাদান এর সমান। তাই বলা যায় গুড়া দুধের উপকারিতা প্রায় তরল দুধের সমান। তবে স্বাদে ভিন্নতা আসতে পারে।
ঠান্ডা দুধের উপকারিতা
দুধ এমন একটি খাদ্য যার মধ্যে প্রায় ৬ টি উপাদান ই বিদ্যমান। যার কারনে শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষ এটা পান করতে পারে। তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে গরম নাকি ঠান্ডা দুধের উপকারিতা বেশি। সকল দুধের উপকারিতা সমান। তবে ক্ষেত্র বুঝে আপনাকে আপ্ন করতে হবে। আপনার যদি স্বাস্থ্য কমাতে চান তাহলে ঠাণ্ডা দুধ পান করতে পারেন। কারন ঠাণ্ডা দুধে বিপাক ক্রিয়া থাকার ফলে এটি শরিরের ওজন কমাতে সহায়তা করে। তবে অবশ্যই শীতের দিনে ঠাণ্ডা দুধ এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা শীতের দিনে ঠাণ্ডা দুধ সেবনের ফলে নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে।
সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়ার উপকারিতা
দুধ মানবদেহের জন্য কতটা উপকারী তা কমবেশি সবারই জানা। এতে থাকা সকল পুষ্টি উপাদান মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী বিশেষ করে ভিটামিন b6 b12 ক্যালসিয়াম ফসফরাস ইত্যাদি হাড় গঠন ও দাঁত মজবুত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিন নিয়মিত দুধ খাওয়া উচিত কখন দুধ খাব সেটা হচ্ছে মুখ্য বিষয়। দুধ কখন খাব এনিয়ে নানাজনের নানা রকমের মন্তব্য রয়েছেঃ আয়ুর্বেদ মতে বলা হয়েছে প্রতিদিন রাতে খাওয়ার শেষে এক ঘন্টা পরে এক গ্লাস করে দুধ খাবেন। আবার অনেকের মতে রাতের বেলা দুধ খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে তাই রাতে ঘুমানোর আগে দুধ খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
ঠিক এমনিভাবে সকালে খালি পেটে দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে সকালে খালি পেটে দুধ খেলে দুধের উপাদান কিছু কিছু মানুষের পেটে এসিডিটি বৃদ্ধি পেতে পারে যার ফলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে দুধের সাথে হালকা হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যেতে পারে।
গরুর শাল দুধের উপকারিতা
প্রসবের পরে যে প্রথম দুধ দোহন করা হয় সেটা মূলত শালদুধ। এটি সাধারণত ঘন ও হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। বাচ্চার জন্য প্রথম টিকা হিসেবে কাজ করে। এর পুষ্টি গুনাগুন পরবর্তী বা সাধারণ দুধের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। শাল দুধ আমিষ সমৃদ্ধ সমৃদ্ধ এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শিশু জন্ডিস এর মত কঠিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। শিশুর পেট পরিষ্কার হওয়া এবং নিয়মিত পায়খানা হতে সাহায্য করে। তাই প্রতিটি শিশু এর ক্ষেত্রে শালদুধ অনেকটা অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে।
দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয় কেন
যে খাদ্যে মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য উপাদান নির্দিষ্ট ও স্বাভাবিক পরিমাণে উপস্থিত থাকে তাকে সুষম আদর্শ খাদ্য বলা হয়। এমন একটি খাদ্য যাতে মানুষের শরীরের চাহিদার সকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। ভিটামিন আমিষ শর্করা ক্যালসিয়াম খনিজ ইত্যাদি সকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকায় দুধকে একটি আদর্শ খাদ্য বলা হয়।
দুধের অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
প্রতিটি বিষয়ই যেমন একটি ভালো দেখে একটি খারাপ দিক আছে ঠিক তেমনি দুধ পান করলে যেমন উপকার আছে তেমনি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা উপকারিতা রয়েছে। আজকে আমরা সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি কিঃ
আপনি যদি একসাথে আনারস এবং দুধ পান করেন সেই ক্ষেত্রে এসিডিটি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে দুধের সাথে এক ধরনের বিষ উৎপাদন হয় ফলে মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
খালি পেটে অতিরিক্ত পরিমাণ দুধ পান করলে এর কারণে এসিডিটি বেড়ে যায় এবং বদহজম বা পাতলা পায়খানা অথবা সমস্যা হতে পারে। হজম সমসসা, মাথা ঘুরান, পেতের পিড়া, ত্বক খস্খশেহয়ে জাওয়া সহ আর অনেক সমস্যা হতে পারে।
পরিশেষে
উপরিউক্ত প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন রকমের দুধের পুষ্টি গুনাগুন উপকারিতা অপকারিতা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি আপনি বুঝতে পারবেন দুধের উপকারিতা কি। কখন কিভাবে খেতে হবে এবং দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়। এই প্রতিবেদনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। প্রতিবেদনটি সম্পর্কে যদি কোন ভুল থাকে অথবা কোনো পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য।