বিবাহ কি ও কেন, মুসলিম বিবাহ আইন ও বিবাহের সংজ্ঞা জানুন

আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে শুরু করছি একটি ইসলামিক পোস্ট তুলে ধরা।।আজকের পোষ্টে বিবাহ কি ও কেন? মুসলিম বিবাহের আইন কি। বিবাহের সংজ্ঞা সহ ইসলামের দৃষ্টিতে  বিয়ের নিয়ম সহ বিস্তারিত তুলে ধরবো।

অনেকেই জানতে চান  বিয়ে কি ও কেন বিয়ে করা হয়। বিয়ে করা কি ফরজ নাকি  সুন্নত। তাছাড়া কেউ কেউ জানতে চান বিয়ে পড়ানোর নিয়ম কি। বিয়ে পড়ানোর দোয়া ও বিবাহের খুতবার আয়াত জানতে চান। আপনারা এসব বিষয় বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

বিবাহ কি ও কেন বিয়ে করা হয়

বিবাহ এর আরবি শব্দ  নিকাহ। যার  যার অর্থ হলো বিবাহের চুক্তি। ইসলামী আইন অনুসারে বিবাহ বা  নিকাহ  হল এমন একটি চুক্তি। যা বিবাহ যোগ্য নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের শরীয়ত সম্মত প্রথা বা স্বীকারোক্তি।

একটি উত্তম আনুষ্ঠানিকতা ও সাক্ষী গনের উপস্থিতির মাধ্যমে শক্তি হওয়াকে ইসলামে বিবাহ বলে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। একটি বিবাহের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামী শরীয়া মোতাবেক বিবাহ হল একটি গুরুত্বপূর্ণ   সুন্নত।  যারা সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত জোরালো ভাবে বলেছেন। বিবাহ কি ও কেন করা হয় এ বিষয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকমের মন্তব্য হয়েছে। কেননা বিবাহ এর মাধ্যমে সকল প্রকার পাপাচার থেকে মুক্তি পাওয়া  যায়। মানসিক শান্তি ও প্রশান্তির আস্থা স্থাপনা হলো বিবাহ। 

বিবাহের সংজ্ঞা

বিবাহ কি? বিবাহ কাকে বলে? কিংবা বিবাহের সংজ্ঞা কি জানতে চান যারা তারা নিচের অংশটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।  বিবাহ একটি সামাজিক বন্ধন ও সামাজিক স্বীকৃতি। যার মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যে সম্পর্কটা পারিবারিক ও শারীরিক সম্পর্কে রূপান্তরিত হয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বিবাহ কার্যক্রম সম্পাদন হয়। বিভিন্ন মনীষীগণ বিখ্যাত ব্যক্তিগন বিবাহের সংজ্ঞা দিয়েছেন বিভিন্নভাবে। বিখ্যাত কিছু ব্যক্তিবর্গের উল্লেখযোগ্য বিবাহের সংজ্ঞা সমূহ নিচে তুলে ধরা হলোঃ

এডওয়ার্ড ওয়েষ্টারমার্ক বিবাহকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন- “বিবাহ হচ্ছে নারী ও পুরুষের মোটামুটি স্থায়ী এমন একটি সম্পর্ক। যা কেবল সন্তান জম্মদান পর্যন্তই স্থায়ী হয় না বরং এরপরও কিছুদিন অন্তত স্থায়ী থাকে।

সমাজবিজ্ঞানী ই,আর,গ্রোভস এর মতে, “বিবাহ হচ্ছে এমন এক দুঃসাহসিক বন্ধন যার আইনগত ভিত্তি এবং সামাজিক গোষ্ঠীর সমর্থন রয়েছে”

উইল ডুরান্ট বলেছেন – বিবাহ শুধুমাত্র যৌন সম্ভোগের ছাড়পত্র নয় ; বিবাহ হল পিতা – মাতা ও সন্তানের সম্পর্ক যা পরিবার গঠন করে সমাজ গঠনের প্রাথমিক এককের ভূমিকা পালন করে।

সুতরাং বোঝাই যায় বিবাহ একটি সমাজ স্বীকৃত সম্পর্ক। যেখানে পারিবারিক যৌন সম্পর্ক তথা সন্তান সন্তানাদির জন্মদান লালন-পালনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

মুসলিম বিবাহ আইন

বিবাহ করার নিয়ম ও সুন্নতি বিয়ের নিয়ম জানুন। বিয়ের শর্ত কয়টি সহ বিবাহ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন এখান থেকে। বহু আগে থেকেই মুসলিম বিবাহ আইন বাংলাদেশ সংশোধন ও পরিমার্জন করে আসছে। তবে শরীয়া মোতাবেক মুসলিম বিবাহ আইন হিসেবে তেমন পরিবর্তন প্রয়োজন হয় না। কিছু শর্তাবলী ও নিয়ম নীতি মেনে বিবাহ করা  যায়। মুসলিম বিবাহ আইন 1974, মুসলিম বিবাহ আইন 1961 এর সংশোধনী কিছু নীতি রয়েছে। ইসলামে মুসলিম বিবাহ আইন সম্পর্কে যেসব শর্ত বা হাদীস বলা হয়েছে তা দেখুন।

মুসলিম বিবাহ আইন বাংলাদেশ এর শর্ত সমূহ

বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। আরে দেশের মুসলিম বিবাহ আইন অন্য মুসলিম দেশের মতোই। বাংলাদেশের মুসলিম বিবাহ আইন এর প্রধান বিষয় গুলো তুলে ধরা  হল।

বয়স

বিবাহের ক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষ উভয়কেই প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। বাংলাদেশের মুসলিম বিবাহ আইন অনুযায়ী পুরুষের 21 বছর এবং নারীর 18 বছর হতে হবে। তবে হাদিস অনুযায়ী নারী এবং পুরুষ ভালো হইলেই বিবাহ করার যোগ্য  হয়।

সম্মতি বা অনুমতি

আমাদের দেশে পারিবারিকভাবে বিবাহ কার্য সম্পাদন করা হয়। এজন্য মুসলিম বিবাহ আইন অনুযায়ী নারী বা পুরুষ বিয়ের জন্য অনুমতি প্রয়োজন। নারী বা পুরুষের অভিভাবক উভয় পক্ষ থেকে অবশ্যই অনুমতি বা সম্মতি নেবে সম্মতি নেবে।

দেনমোহর

ইসলামের দৃষ্টিতে দেনমোহর হলো নারীর হক। একজন পুরুষ যখন কোন নারীকে বিবাহের জন্য প্রস্তাব পেশ করিবেন। তখন তাকে উপযুক্ত দেনমোহর প্রদান করিতে  হইবে। দেনমোহর ব্যতীত গণবিবাহ কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারেনা। তবে এক্ষেত্রে স্ত্রী চাইলে দেনমোহর অর্ধেক বা পুরোটুকু মওকুফ করতে  পারেন।

সাক্ষী

সাক্ষী গনের সাক্ষ্য   ছাড়া কোন বিবাহ কার্য সম্পন্ন হবে না। এক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষ উভয়ের সাক্ষীগণ উপস্থিত থাকতে হইবে। মুসলিম বিয়েতে দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষী উপস্থিত থাকা  বাধ্যতামূলক। সাক্ষী  ছাড়া বিবাহ কার্য বৈধ বলে বিবেচিত হবে না।

বাংলাদেশ এর মুসলিম বিবাহ আইন বাংলাদেশ এর নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ করতে গেলে অবশ্যই সকল ধারা মেনে বিবাহ করতে হবে। যদি কোন মুসলমান ব্যক্তি কোন হুজুরের দ্বারা বিবাহ কার্য সম্পাদন করে। তাহলে অবশ্যই তাকে কোন রেজিস্ট্রি অফিস থেকে নিবন্ধন করতে হবে। বিয়ে পরবর্তী 30 দিনের মধ্যে বিবাহ রেজিস্ট্রি কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি কার্যক্রম সম্পাদন করার দায়িত্ব স্বামীর পক্ষ থেকে।

পরিশেষে

আজকের পোস্টটিতে আমরা বিবাহ কি ও কেন? বিবাহের সংজ্ঞা দাও সহ মুসলিম বিবাহ আইন  শর্ত তুলে ধরেছি। আশা করছি আপনারা বিবাহের সংজ্ঞা কি তা জানতে পেরেছেন। পুরো পোস্ট জুড়ে আমরা বিবাহ কি ও কেন এবং মুসলিম বিবাহ আইন নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনারা পুরো পোস্টটি বুঝতে  পেরেছেন। ভালো লেগে থাকলে পোস্টটি  বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment