ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঘি কখন কিভাবে কতটুকু খাবেন

ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা কি। ঘি বানানোর নিয়ম ও ঘি এর পুষ্টিগুণ কি। ঘি এর দাম কত ও কোন কোম্পানির ঘি ভালো। গরমে নাকি শীতে ঘি খাওয়ার উপকারিতা বেশি? গাওয়া ঘি কি, গাওয়া ঘি খাওয়ার নিয়ম কি? খাঁটি ঘি এর ছবি ও খাঁটি ঘি চেনার উপায় জানতে চান? ঘি খেলে কি মোটা হয় অথবা গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা কি জানতে চান? কিংবা জানতে চান ঘি এর অপকারিতা কি? তাহলে আজকের পোস্ট আপনার জন্য খুব বেশি উপকারি। কেননা আজকে আমরা ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সহ ঘি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই পুরো আর্টিকেল টি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ঘি (Ghee) কি, ঘি বানানোর নিয়ম ও ঘি এর পুষ্টিগুণ

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে ঘি আসলে কি। ঘি এর ইংরেজি কি অনেকেই হয়তো জানেন না। ঘি এর ইংরেজি নাম হল Clarified Butter (ক্লারিফাইড বাটার)। এটি মুলত এক ধরনের সম্পৃক্ত চর্বি যা দুধ থেকে তৈরি করা হয়। এতে প্রায় ৯৯.৯৯% চর্বি থাকে আর বাকি টুকু হল চর্বিতে মেশানো পানি। ঘি প্রাচীনকাল থেকেই একটা জনপ্রিও খাবার। যা অত্তাধিক পুষ্টিকর ও উপকারি খবার হিসেবে প্রসিদ্দ।

ঘি বানানোর নিয়ম

সাধারণত ২ ভাবে ঘি তৈরি করা যায়। এক হল মাখন থেকে আর এক হল গরুর দুধ থেকে। মাখন কে গরম কড়াই তে ডেলে দিয়ে জাল দিতে হয় এবং সেটা জমিয়ে ঘি তৈরি হয়। গরুর দুধ দিয়ে ঘি বানানোর নিয়ম হল প্রথমে দুধ জাল দিয়ে সর বানাতে হবে। তারপর সেই সর কে ফ্রিজে রাখতে হবে। সেটা পরে আবার জাল দিলে ঘি হয়ে যাবে।

ঘি এর পুষ্টিগুণ

খাঁটি ঘি বহু পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। ঘি এর পুষ্টিগুণ গুলোর মধ্যে ভিটামিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,  ফ্যাটি এসিড, লিনোলিক এসিড এবং ওমেগা থ্রি  রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এসব পুষ্টি উপাদান হাড়ের গঠন মজবুত দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ব্রেইন টনিক মানুষের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রতিটি জিনিসেরই দুটি দিক থাকে। একটি ভালো দিক এবং অপরটি খারাপ দিক। তেমনি গিয়ে এর উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই  আছে।  ঘি খাওয়ার নিয়ম মেনে খেলে উপকারিতা ভাল পাবেন। তো আসুন ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সমূহ জেনে নেই

ঘি এর উপকারিতা ও ব্যবহার

ঘি এর বহুজাতিক উপকারিতা রয়েছে। গাওয়া ঘি এর উপকারিতা, পুরাতন ঘি এর উপকারিতা, খাঁটি ঘি এর উপকারিতা। সরের ঘি এর উপকারিতা। গরমে ঘি এর উপকারিতা, গরুর দুধের ঘি এর উপকারিতা সহ নানাবিধ উপকারিতা দেখে নিন।

ওজন কমাতেঃ চর্বিযুক্ত খাবার হওয়ায় এটি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি আপনার শরীরের ওজন বাড়াতে চান তাহলে নিয়মিত গরম ভাতের সাথে এক চামচ ঘি খেতে পারেন।

ক্ষতিকর কোলেস্টোরেল কমাতেঃ কোলেস্টোরেল মুক্ত খাবার হওয়ায় শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। এবং উপকারী কোলেস্টরেল গুলো বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ ঘি এ থাকা অ্যাসিড এনার্জি ও শক্তি বাড়ায়। তাছাড়া বাইরাইক এসিড হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ  ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড খুদা কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে ঘি  ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া গিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে। 

ত্বকের প্রদায় কমাতেঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ত্বকের প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে। নিয়মিত রাতে মুখমন্ডলে কি মেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেললে ত্বক কোমল ও  মসৃণ হয়।

হার্ট অ্যাটাক এড়াতেঃ হূদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে থাকে ঘি।

ক্ষত সারাতেঃ ঘি তে থাকা লিনোলিক এসিড দেহের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই প্রসবের পরে মায়েদের কে ঘি খাওয়ানো হয়।

শীতে ঘি খাওয়ার উপকারিতা

শীতকালে সাধারণত আমাদের হাত পা শুস্ক হয়ে যায়। আর ঘি এমন একটা উপদান দিয়ে তৈরি যা মানব দেহের পানি শুন্যতা কমিয়ে দেয়। ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ এর মতেশীতে ঘি খাওয়ার উপকারিতা সব চেয়ে বেশি। কার যদি শীতে ঠোঁট ফেটে যায় তাহলে সে ঠোঁট এ একটু ঘি লাগালে তা ঠিক হয়ে যায়। ঘি শুধু শীত কালে নয় গরমেও ঘি খাওয়া যায়। তবে গরমের চেয়ে শীতে ঘি খাওয়ার উপকারিতা বেশি পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন গবেষক গণ।

চিকিৎসকদের মতে, ঘি খাওয়ার একেবারে উপযুক্ত সময় হল শীতকাল। শীতে মানুষের শরীর উষ্ণ রাখতে ঘি বেশ কার্যকরী ভুমিকা রাখে। শরীরের পাশাপাশি ঘি ত্বকের যত্নেও ভাল কাজ করে। ত্বক টান টান ভাব কমাতে বা মরা চামড়া দূর করতে ত্বকে ঘি ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ হয়।

গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা

যুগ যুগ ধরে ঘি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। গর্ভাবস্থায় বা মাতৃ কালীন সময়ে ঘি ব্যবহার হয়ে আসছে। গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা কি তা বলে বুঝানো যাবেনা। ঘি সাধারণত শক্তি উৎপাদন করে থাকে। তাছাড়া গর্ভ অবস্থায় নারীদের ২০০ থেকে ৩০০ কালরি বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। যা ঘি খেলে জোগান দেওয়া সম্ভব। গর্ভাবস্থায় ঘি খেলে মা ও শিশু দুজনেরি উপকার হয়। দেহের খতিগ্রস্থ টিস্যু কে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ঘমতা বৃদ্ধি পায় বহুগুনে। 

কোন কোম্পানির ঘি ভালো ও খাঁটি ঘি চেনার উপায়

অনেকেই জানতে চান কোন কোম্পানির ঘি ভালো। কেও কেও জানতে চান ঘি খাঁটি কিনা তা বুঝব কিভাবে। তাদের কে বলে রাখছি বাজারে অনেক কোম্পানি এর ঘি পাওয়া যায়। আড়ং এর ঘি, প্রান এর ঘি সহ আরও অনেক কোম্পানি ঘি বিক্রি করে থাকে। তবে অনেকেই আবার ভেজাল মেশানর চেষ্টা করে থাকে।

ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা
ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা

কেও কেও খাঁটি ঘি চেনার উপায় জানতে চান।  খাঁটি ঘি এর ছবি দেখে অনেকেই ঘি চেনার চেষ্টা করে থাকেন। তবে ২ ভাবে ঘি খাঁটি কিনা তা শনাক্ত করা যায়। ম্যানুয়ালি ও ল্যাবরেটরি তে পরিক্ষা করে। আপনি হাতের তালুতে এক চামচ ঘি নিন। যদি কিছুক্ষণ এর মধ্যে ঘি ঘলে যায় তাহলে বুঝে নিবেন ঘি খাঁটি আছে। কারণ ঘি তাপ পেলে গলে যায়। ভেজাল মিশ্রিত ঘি হাতের তালুতে নিলে গলবে না।

৫ মিলি. হাইড্রোক্লোরিক এসিড যোগ করুন এক চামচ ঘি তে। যদি ঘি লাল হয় তবে বুঝবেন ঘি তে ভেজাল মেশানো আছে।

ঘি এর দাম কত টাকা কেজি

বাজারে এখন ঘি এর সহজলভ্যতা অনেক। তাছাড়া আজ কাজ ঘি এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এর চাহিদা ও বেড়েছে অনেক। বিভিন্ন হোটেল রেস্তরায় ঘি ব্যবহার করা হয়। তাই কেও কেউ জানতে চান ঘি এর দাম কত বা ঘি কত টাকা কেজি। 1 কেজি ঘি এর দাম কত তা জান্তেই আমাদের অনেক বেগ পোহাতে হয়। কেউ কেউ আবার কোম্পানির নাম উল্লেখ করে দাম জানতে চান। এই ধরেন ৫০ গ্রাম ঘি এর দাম বা প্রাণ ঘি এর দাম ৫০ গ্রাম কত টাকা। 

তো বর্তমানে বাজারে যে ঘি পাওয়া যায় তা প্রায় ১২০০ টাকা কেজি। সেই হিসেবে ৫০ গ্রাম ঘি এর দাম হয় ৬০ টাকা। ঘি এর দাম এলাকা ভেদে কম বেশি হতে পারে।

ঘি এর অপকারিতা কি

আসলে ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই রয়েছে। তবে ঘি এর অপকারিতা এর চেয়ে উপকারিতা বেশি। তবুও ঘি এর অপকারিতা কি তা আমাদের জানা জরুরি। কেননা কোন অবস্থায় ঘি খাওয়া ভাল বা খারাপ তা না জানা থাকলে শরীরে অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই আসুন জেনে নেই ঘি এর অপকারিতা গুলো কি কি।

  1. অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে ঘি এড়িয়ে চলুন। কেননা ঘি একটা চর্বি জাতীয় খাবার। যা খেলে দেহের ওজন বাড়ে। তাই শরীরে ওজন কমাতে ঘি এড়িয়ে চলতে হবে।
  2. প্রবীণ বা বয়স্ক নাগরিক দের ঘি এড়িয়ে চলাই ভাল। ঘি হার্ট অ্যাটাক এর কারন হতে পারেন।
  3. ডায়বেটিস হলে ঘি খাওয়া যাবেনা।
  4. বেশি পরিমানে ঘি খেলে কান্সারের ঝুকি থাকে। তাই পরিমানে কম খেতে হবে।
  5.  ডায়রিয়া হলে ঘি এড়িয়ে চলুন। কেননা এতে থাকা চর্বি ডায়রিয়া বারিয়ে দিতে পারে।

শেষকথা

আজকের পোস্টটি তে আমরা খুব ভাল করে ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। সেই সাথে ঘি কিভাবে বানানো হয়, খাঁটি ঘি চেনার উপায় তুলে ধরেছি। ঘি এর পুষ্টিগুণ তুলে ধরেছি। শীতে ঘি খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় ঘি খাওয়ার উপকারিতা নিয়েও আলোচনা করেছি।

আশা করছি আজকের পোস্ট টি আপানাদের অনেক উপকারে আসবে। এবং আলোচ্য বিষয় গুলো বুঝতে পেরেছেন। যদি কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।

2 thoughts on “ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ঘি কখন কিভাবে কতটুকু খাবেন”

Leave a Comment