আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়, উপকারিতা ও দাম জানুন

আসসালামু আলাইকুম। আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় নিয়ে বিস্তারিত বিশদভাবে আলোচনা করার জন্য উপস্থিত  হয়েছি।  আপনি যদি আজকে আজওয়া খেজুর সম্পর্কে জানতে চান।  আজওয়া খেজুর কি,  আজওয়া খেজুরের ইতিহাস, আজওয়া খেজুর চেনার উপায় আজওয়া খেজুর খাওয়ার  উপকারিতা, আজওয়া খেজুরের দাম কত ইত্যাদি ইত্যাদি নানাবিধ প্রশ্ন জেগে থাকে তাহলে এই পোষ্ট টি আপনার জন্য।

আজওয়া একটি আরবি শব্দ। এর বাংলা অর্থ ফল বিশেষ। যা তালগাছ বা বিশেষ ধরনের গাছে জন্মে বা এক ধরনের  আঙ্গুর যা আরব  দেশ তথা মরুভূমির দেশে ফলন হয়।

আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়

আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় হল এটি অনেক্তা গলাক্রিতি, বেশি লম্বা বা বেশি খাটো নয়। আজওয়া খেজুরএর বোটাটি গোলাপি এবং আসল আজওয়া খেজুরের মাথার দিকে সোনালী রংএর দাগ থাকবে

আজওয়া খেজুর টি হবে চমকানো কালো রংয়ের । 

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

আজওয়া খেজুর কিংবা যে কোন খেজুর এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বলতে গেলে একটা কথাই বলতে হয়। খেজুর খাওয়ার অপকারিতা বলতে কিছু নাই। শরীর সুস্থ রাখতে কিংবা যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে প্রচুর পরিমানে। নিয়মিত একগ্লাস দুধ এর সাথে ২ টি করে খেজুর নিয়মিত খেলে শুক্রাণু বৃদ্ধি পায়। ফলে বন্ধাত্তা রোধ করে ও সন্তান জন্ম দানের হার বৃদ্ধি করে। তাছাড়া শুকনো খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সব থেকে বেশি। শুকনা বা খুরমা খেজুর কে মরুভুমির গ্লুকোজ বলা হয়ে থাকে। খেজুর খাওয়ার উপযুক্ত সময় জেনে নিয়মিত খেজুর খেলে খেজুরের উপকারিতা সব থেকে বেশি পাওয়া যায়। নিচের অংশে আমরা খেজুর খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেছি। খেজুর খাওয়ার উপকারিতা বা ভাল ফলাফল পেতে অবশ্যই নিয়ম মেয়ে খেজুর খেতে হবে।

খেজুর খাওয়ার নিয়ম

প্রতিটা জিনিসের থেকে ভাল ফল পেতে দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মিত করতে হয়। তেমনি খেজুরের উপকারিতা পেতে খেজুর খাওয়ার নিয়ম জেনে খেজুর খেতে হবে। দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত বাএকখন খেলে ভাল ফল পাওয়া যায় তা জানা জরুরি। অতিরিক্ত খেজুর খেলে কি হয় অথবা খেজুর খাওয়ার অপকারিতা কি সেটাও জানা জরুরি। গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে কি হয় বা গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে কিনা সেটা জানাও গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিসে খেজুর খাওয়া যাবে কি না বা কিডনি রোগী কি খেজুর খেতে পারবে কিনা টা জানতে পুরো পোস্ট মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। আমরা এই পোস্টেই এ সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছি। এইবার আসুন খেজুর খাওয়ার নিয়মগুলো জেনে নেওয়া যাক।

সকালে খালি পেটেঃ রাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে ২ টি খোরমা খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি খালি পেটে খেলে খুব ভাল উপকার পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে শুকনা খেজুর ডায়েট নিয়ন্ত্রন করে। কেননা এতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। যার ফলে এটি খেলে ডায়েট এর কাজ করে। খুদা দূর করতে কয়েকটি খেজুর খেয়ে একগ্লাস পানি খেলে কয়েক ঘণ্টা কাজ করার স্টামিনা পাওয়া যায়। সকালে মধু এর সাথে ২-৩ টা খেজুর খাওয়া যেতে পারে।

দুপুরে খেজুর খাওয়াঃ আপনি যদি চিকন বা স্কিনি হন তাহলে খেজুর দিয়ে মিল্ক সেক তৈরি করে খেতে পারেন। দুধের সাথে খেজুর খাওয়া যেতে পারে। সাধারণত দিনের বেলা কাজের চাপে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। খেজুরে রয়েছে ২০-২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই দিনের বেলা রক্তচাপ কমাতে খেজুর খাওয়া যেতে পারে।

রাতে খেজুরঃ একজন মানুষকে সুস্থ থাকতে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন তার ১১ ভাগই মিটিয়ে থাকে খেজুর। তাই আপনার যদি রক্তস্বল্পতা থেকে থাকে খাবার লিস্তে খেজুর রাখতে পারেন। বদহজম প্রতিরোধে রাতে খেজুর রাখতে পারেন। রাতে দীর্ঘ সময় সহবাস করতে ও আপনার সঙ্গীকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিতে একগ্লাস গরম দুধের সাথে মাত্র দুইটি খেজুর খেলেই কাজ হয়ে যাবে।

আজওয়া খেজুরের ইতিহাস

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে আজওয়া খেজুরের  ইতিহাস কি। মূলত আজওয়া খেজুর হলো একটি জান্নাতি ফল। আরব দেশে মরুভূমিতে অনেক রকমের খেজুর জন্মে। আজওয়া খেজুর সবচেয়ে অন্যতম। কারণ এই আজওয়া খেজুর আমাদের নবী করিম সাঃ নিজ হাতে চারা রোপণ করেছিলেন এবং খুব দ্রুত সময়ে খেজুর উৎপাদন  করেছিলেন।  মূলত একজন ইহুদির হাত থেকে মুসলমান ব্যক্তিকে উদ্ধার করার জন্য এই কাজটি করেছিলেন আমাদের রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

সালমান ফারসি ছিলেন একজন ইহুদি বণিকের ক্রীতদাস। তাকে দিয়ে অনেক পরিশ্রম করানো হতো। সে পরিশ্রম না করতে পেরে সেখান থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেছিলেন কিন্তু তাকে দুটি শর্ত দেয়া হয়েছিল দুটি শর্ত পূরণ করতে পারলে তাকে মুক্তি দেয়া হবে। শর্ত দুইটি ছিল চল্লিশটি স্বর্ণমুদ্রা দিতে হবে এবং 300 খেজুর চারা উৎপাদন করে সেখান থেকে ফল উৎপাদন করে দিয়ে যেতে হবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে। যা ছিল অসম্ভব কারণ তিনি যে সময় দিয়েছিলেন সেই সময়ের মধ্যে খেজুর উৎপাদন করা চারা রোপণ করা সম্ভব ছিল না। বিষয়টি আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর অবগত হয়। এবং তিনি সেই চারা রোপণ করেন এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে খেজুর উৎপাদন করে তাকে দিয়ে দেন। এবং সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে মুক্ত করে নিয়ে  আসেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে খেজুর গাছের চারা রোপণ করেছিলেন এটাই হচ্ছে আসল আজওয়া খেজুর।

বাংলাদেশে আজওয়া খেজুরের দাম

আপনারা অনেকেই ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে  আজওয়া খেজুরের দাম সম্পর্কে সার্চ দিয়ে থাকেন। মূলত আজওয়া খেজুর 450 থেকে 500 টাকা কেজিতে বিক্রি হয়ে থাকে। অঞ্চলভেদে এই জান্নাতি ফল আজওয়া খেজুরের দাম কম বেশি হতে পারে। আজকাল অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে এই খেজুর ক্রয় করে থাকে। অনেকেই আবার হজে গিয়ে সেখান থেকে আজওয়া খেজুর কিনে নিয়ে  আসে।

ঘি এর উপকারিতা অপকারিতা সহ খাওয়ার নিয়ম জানতে ক্লিক করুন

আজওয়া খেজুর এর উপকারিতা

চিকিৎসা বিজ্ঞান ও হাদিস অনুযায়ী আজওয়া খেজুরের উপকারিতা অনেক। চিকিৎসা চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এতে রয়েছে প্রচুর খাদ্যআঁশ এবং ভিটামিন এ,বি,সি এবং  কে। ভিটামিন এ এর অন্যতম উপাদান এর উপস্থিতি বেশি থাকার কারণে এই ফল চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়া এ ছাড়াও আরো যা নিচে বিশদভাবে আলোচনাঃ

১। আজওয়া খেজুরের রয়েছে 77 দশমিক 5 শতাংশ কার্বোহাইড্রেট যা শরীরে অন্য খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে।

২।  এটি প্রতিদিন খেলে কোলেস্টরেল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৩। রোগের ঝুঁকি কমায়, লিভার ও পাকস্থলীর শক্তি বৃদ্ধি করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।

৪। হাদিস মতে যে ব্যাক্তি এই ফল প্রতিদিন সকালে খাবে  তাকে ঐদিন জিন ভুত অথবা কালো জাদু আক্রমণ করতে পারবে না।

৫।  যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৬। ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকায় দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।

৭। আজওয়া খেজুরের ভিটামিন এ এর উপাদান ক্যাটারিং থাকায় চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।

৮।  এতে  ভিটামিন এ এ,বি,সি, কে বিদ্যমান রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট হিসেবে কাজ করে।

কিসমিস এর উপকারিতা অপকারিতা সহ খাওয়ার নিয়ম জানতে ক্লিক করুন

খেজুর নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ  ১ টি খেজুরে কত ক্যালরি?

উত্তরঃ একটি খেজুরে পায় ৬৬ ক্যালরি শক্তি থাকে। তার ৯৮ ভাগই হল শর্করা।

প্রশ্নঃ কিডনি রোগী কি খেজুর খেতে পারবে?

উত্তরঃ কিডনি রগে আক্রান্ত রোগীর GFR মান যদি ৩০ এর কম হয় তাহলে খেজুর না খাওয়াই ভাল। কেননা খেজুর, শুকনা ফলমূল, ডাবের পানি, শশা, আলু, টমেটো, কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম যা কিডনি রোগীর জন্য খাওয়া উচিৎ নয়।

প্রশ্নঃ খেজুর এর ইংরেজি?

উত্তরঃ খেজুর এর ইংরেজি হলো Dates.

প্রশ্নঃ খেজুর বেশি খেলে কি হয়?

উত্তরঃ খেজুরের ফাইবার হজম বৃদ্ধি করে। তবে অতিরিক্ত ফাইবার বদহজম, পেটফাঁপা ও গ্যাস্টিক এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রশ্নঃ কোন খেজুর সবচেয়ে ভালো?

উত্তরঃ সকল খেজুর এর মধ্যে আজওয়া খেজুর সব থেকে ভাল। এই খেজুরই আমাদের হুজুরে পাক খেতেন।

প্রশ্নঃ ১ কেজি খেজুরের দাম কত?

উত্তরঃ ১ কেজি খেজুর এর দাম স্থান কাল প্রকারবেদে ৩০০ থেকে ১২০০ টাকা হয়ে থাকে।

 প্রশ্নঃ খেজুর খেলে কি প্রেসার বাড়ে?

উত্তরঃ খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম যা রক্তের চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীর ডায়াটে খেজুর যেতে পারে।

প্রশ্নঃ খেজুর খেলে কি বীর্য ঘন হয়?

উত্তরঃ নিয়মিত খেজুর খেলে বীর্য ঘন হয়।

প্রশ্নঃ সেক্সে খেজুরের উপকারিতা?

উত্তরঃ মধু বা দুধের সাথে খেজুর খেলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্নঃ দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত?

উত্তরঃ প্রতিদিন ৫-৬ টি খেজুর খাওয়া যেতে পারে।

প্রশ্নঃ খেজুর খেলে কি মোটা হওয়া যায়?

উত্তরঃ ডায়েটে খেজুর ভুমিকা রাখে। তাই খেজুর খেলে ওজন বাড়ার হার খুবই কম।

প্রশ্নঃ খেজুর খেলে কি ওজন বাড়ে?

উত্তরঃ না। খেজুর খেলে ওজন বাড়ার হার খুবই কম।

প্রশ্নঃ গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া যাবে কি?

উত্তরঃ খেজুরে থাকা ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন বি সিক্স শক্তি যোগায় যা মা ও শিশুর জন্য খুবই উপকারী।

প্রশ্নঃ ডায়াবেটিসে খেজুর খাওয়া যাবে কি?

উত্তরঃ মিষ্টির বিকল্প হিসেবে খেজুর খাওয়া হয়ে থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগী প্রতিদিন ১-২ টি করে খেজুর খেতে পারেন।

পরিশেষেঃ

অপুষ্টিতে আজওয়া খেজুর সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।  আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়, আজওয়া খেজুরের উপকারিতা,  আজওয়া খেজুরের ইতিহাস ইত্যাদি বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি এই পোস্টটি পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন এবং আপনাদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে এটি শেয়ার করবেন যাতে তারাও বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারে। এই পোষ্ট সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য বা কোন প্রশ্ন থাকলে আপনি কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করতে পারেন। সবাইকে ধন্যবাদ আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি।

Leave a Comment