যবের ছাতুর উপকারিতা ও ছাতু বানানোর নিয়ম শিখে নিন

যবের ছাতুর উপকারিতা ও পুষ্টি গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করবো। ছাতু কি, ছাতু তৈরি করার পদ্ধতি ও যবের ছাতুর দাম সহ যবের ছাতু কোথায় পাওয়া যায় তা জানাবো। যবের ছাতু খাওয়ার উপকারিতা সহ ছাতুর নানান দিক তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তাই আপনারা পুরো আর্টিকেল টি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

প্রাচীন কাল থেকেই ছাতু একটি জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর খাবার। যা দেহের নানাবিদ উপকার করে আসছে। ইতিহাসবিদ দের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশের ও বিহারের কিছু অঞ্চল থেকে ছাতুর প্রচলন হয়। ছাতু তে প্রচুর পরিমান কার্বো হাইড্রেড থাকায় তা মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারি।

যবের ছাতু কি?

যব হল এক ধরনের শস্য দানা। যা অনেকটা গমের মত। গ্রাম অঞ্চলে একে পায়রা বলে অবিহিত করে। ছাতু কি বা যবের ছাতু কি এসব প্রশ্নের সহজ উত্তর হল। শস্য দানা যব কে গুরো করে যে খাবার তৈরি করা হয় তাই যবের ছাতু নামে পরিচিত। আমাদের রাসূল (সঃ) যবের ছাতু খুব পছন্দ করতেন। যবের ছাতু ঔষধ হিসেবে খেয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। 

যবের ছাতুর পুষ্টিগুণ

পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় ছাতুর উপকারিতা অনেক বেশি। ছাতুতে প্রায় সকল পুষ্টিগুণই ভরপুর থাকে। ছোলার ছাতু তে কি প্রোটিন আছে দেখুন।

প্রোটিন-১০০ গ্রাম ছাতুতে থাকে ২০.৬ শতাংশ
ফ্যাট-৭.২ শতাংশ
ফাইবার-১.৩৫ শতাংশ
কার্বোহাইড্রেট,-৬৫.২ শতাংশ
ভুষি-২.৭ শতাংশ
ময়শ্চার-২.৯৫ শতাংশ ও
এনার্জি-৪০৬ ক্যালোরি।

যবের ছাতুর উপকারিতা

শস্য দানা থেকে তৈরি করা হয় বলে যবের ছাতুর উপকারিতা অনেক বেশি। অরগানিক ছাতু সাস্থের জন্য অনেক উপকারি।

এতে প্রচুর পরিমানে খনিজ, প্রোটিন ও কার্বো হাইড্রেড থাকে। যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারি। আসুন যবের ছাতু খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিই। আরও পড়ুনঃ গমের ছাতুর উপকারিতা, বুটের ছাতুর উপকারিতা, ভুট্টার ছাতুর উপকারিতা, ছোলার ছাতুর উপকারিতা ও জবের ছাতুর উপকারিতা।

হজম শক্তি বৃদ্ধিতেঃ ছাতু দ্রুত হজম হয় এবং হজম শক্তি বাড়ায়।এতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ফাইবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা।

মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতেঃ ছাতু তে থাকা খনিজ ও ভিটামিন মস্তিস্কের প্রবাহ সচল রাখে।

রক্তচাপ ও কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রনেঃ পানিতে গুলে ছাতু খেলে  রক্তচাপ কমে যায়। যাদের হাই প্রেসার আছে তারা নিয়মিত ছাতু খেতে পারেন।

এতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফাইবার থাকায় কোলেস্টরেল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রনেঃ ছাতুতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় শর্করা বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকেনা। ফলে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রনে রাখে। তাছাড়া এটি পেটে থাকা চর্বি ও অন্য সকল খারাপ উপাদান বের করে আনে। তবে এটি খেতে অবশ্যই মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

মাসিকের সমস্যা সমাধানেঃ ছাতুতে প্রচুর পরিমানে খনিজ ও ভিটামিন থাকে। যা শরিরে শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। মাসিকের সময় পুষ্টি ঘাটতি।

এ ক্ষেত্রে ছাতু পুষ্টি ঘাটতি পুরন করতে পারে।

শরীর ঠাণ্ডা রাখে ও শক্তি বাড়ায়ঃ ছাতু প্রচুর পরিমানে পানি শোষণ করে রাখে। ফলে ছাতু খেলে শরীর শিতল ও ঠাণ্ডা থাকে। তাছাড়া ছাতু দ্রুত হজম হয় বলে এটি দ্রুত শরীরে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সেই সাথে মস্তিস্কের কার্যকারিতা সচল রাখতে সাহায্য করে।

ছাতু বানানোর নিয়ম

যারা যবের ছাতু তৈরি করার পদ্ধতি জানতে চান। যবের ছাতু রেসিপি জানতে চান তারা দেখে নিন।

ছাতু তৈরি করার পদ্ধতি খুবই সহজ। ছাতু কিভাবে তৈরি হয় তার একটি নমুনা দেখিয়ে দিচ্ছি। দেখুন ছাতু বানানোর নিয়ম গুলো।

  1. প্রথমে যব প্রস্তুত করতে হবে। মানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
  2. তারপর সেই যবকে রোদে শুকিয়ে ভাজি করতে হবে।
  3. ভাজি করা যব গুলো মেশিন বা ব্লেন্দার এর মাধ্যমে গুরিয়ে ফেলতে হবে।
  4. আর আভাবেই হয়ে গেল যব এর ছাতু বানানো।

আপনি চাইলে ছোলা, বুট পায়রা, ভুট্টা ইত্যাদি দিয়েও ছাতু বানাতে পারবেন।

ছোলা গম ও ভুট্টার ছাতুর উপকারিতা দেখে নিন একনজরে

বিভিন্ন ধরনের ছাতুর উপকারিতা ভিন্ন রকম হলেও মোটামুটি একই। ছোলার ছাতু তে কি প্রোটিন আছে ও ভুট্টার ছাতুর উপকারিতা দেখুন।

১। দ্রুত ও সহজে সজম হয় বলে এটি খুবই উপাদেয় খাবার।
২। এতি প্রচুর পরিমানে পানি ধারন করে নেয় বলে শরিরকে শীতল রাখতে পারে।
৩। শরীরে জালা ভাব দূর করে মানুষিক প্রশান্তি আনে মনে।
৪। নিয়মিত ছাতু খেলে কফ ও পিত্ত নাশ করে।
৫। দ্রুত হজম হয় বলে দ্রুত খুদা লাগে। ফলে খাবারের চাহিদা বাড়ে।
৬। শুক্র বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরী ভুমিকা রাখে।
৭। দাঁতের মারি বাথা ও ফুলে গেলে ছাতু খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৮। যাদের হার্ট এর সমস্যা আছে তারা এটা নিয়মিত খেতে পারেন। হার্ট এর রোগীদের পথ্য হিসেবে কাজ করে।
১২। যাদের খাবারের হজম সমস্যা বা বদ হজম আছে তারা ছাতু খেতে পারেন। ছাতু হজমের সমস্যা দূর করে পেট ঠান্ডা রাখে।
১৩। ছাতু একটি  ফাইবার বা আঁশ সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় শরীর অনেক উপকারে আসে।

গর্ভাবস্থায় ছাতু খাওয়ার উপকারিতা

অনেকেই জানতে  চান গর্ভাবস্থায় ছাতু খাওয়ার উপকারিতা কি। তাদের জানা আবশ্যক যে, ছাতু একটি ফসল থেকে তৈরি খাদ্য। যার পুষ্টি গুন অতুলনীয়। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের বেধি শক্তির প্রয়োজন হয়। শারীরিক দুরবলতা দেখা দেয়। ছাতু তে থাকা ভিটামিন ও প্রোটিন সহ প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। তাই গর্ভাবস্থায় ছাতু খাওয়ার উপকারিতা সব চেয়ে বেশি। পায়রার ছাতু এ ক্ষেত্রে খুবই ভাল। মাতৃ কালীন সময়ে ছাতুর শরবত খেতে পারলে ভাল। 

যবের ছাতুর দাম কত ও কোথায় পাওয়া যায়

প্রাচীনকালে ছাতু দিয়ে মুড়ির সাথে আতিথেয়তা করা হত। কিন্তু আজকাল এর চাহিদা কমে যাওয়ায় এটি উৎপাদন কমে গেছে। অনেকেই জানেন না যবের ছাতু কোথায় পাওয়া যায়। যবের ছাতুর দাম কত ও কোথায় পাওয়া যায় সেটা জেনে নিন।

আজকাল এখন গ্রাম অঞ্চলে যব খুব অল্প পরিমানে চাষ হয়। তাই গ্রাম অঞ্চলে পারিবারিক ভাবে তারা যবের ছাতু বানিয়ে থাকে। গ্রামে যবের ছাতু পাওয়া যায়। তাছাড়া কিছু কিছু বড় দোকান গুলতে পাওয়া যেতে পারে। যবের ছাতুর দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি হয়ে থাকে। তবে অঞ্চল ভেদে এই দাম কম বা বেশি হতে পারে।

ছাতু খাওয়ার নিয়ম

অনেক তো জানা হল ছাতু কি। ছাতুর পুষ্টিগুণ ও যবের ছাতুর উপকারিতা ও জানা হল। তো এবার জেনে নেওয়া যাক ছাতু খাওয়ার নিয়ম। ছাতু বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। দেখে নিন যবের ছাতু খাওয়ার নিয়ম সমুহ।

  • একগ্লাস পানিতে ২ টেবিল চামচ যবের ছাতু নিয়ে গুলে খেতে পারে। সেক্ষেত্রে লবন পরিমাণ মত দিতে হবে। মিষ্টি করে খেতে চাইলে একটি চিনি বা আখের গুঁড় মিয়ে নিতে পারেন। ছাতুর শরবত দ্রুত হজম হয়ে থাকে।
  • একটি প্লেট বা বাটিতে কিছু পরিমাণ যবের ছাতু নিয়ে লবন ও বিচি কলা দিয়ে খেতে পারেন। গ্রামে এখন পায়রার ছাতু দিয়ে কলা দিয়ে খাওয়ার প্রচলন দেখা যায়।
  • ছাতি দিয়ে রুটি বানিয়ে খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে রুটিতে হালকা খাঁটি ঘি মিশিয়ে নিতে পারেন।
  • তাছাড়া বিভিন্ন খাবার তৈরিতে ও ভাজিতে ছাতু ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • ছাতুকে সকালের নাস্তা হিসেবে রাখতে পারেন।

ছাতু খাওয়ার অপকারিতা

ছোলার ছাতুর অপকারিতা কি জানতে চান অনেকেই। পায়রার ছাতু একটি ভেষজ হওয়ায় এর কোন অপকারিতা নেই। তবে গমের ছাতু বা ছোলার ছাতু অধিক খাওয়াতে কিছু অপকারিতা পরিলক্ষিত হয়। যাদের ডায়বেটিস আছে তারা ছাতু খাওয়ার সময় মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। ছাতু দ্রুত হজম হয় বলে এটি দিনের বেলা খাওয়াই ভাল। 

পরিশেষে

আজকের পোস্ট টিতে যবের ছাতুর উপকারিতা ও ছাতু বানানোর নিয়ম তুলে ধরেছি। গর্ভাবস্থায় ছাতু খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরেছি।

যবের ছাতুর পুষ্টিগুণ ও ছোলার ছাতু তে কি প্রোটিন আছে, ছাতু খেলে কি ওজন বেড়ে যায় আসব নিয়েও আলোচনা করেছি। আশা করছি আজকের পোস্ট টি আপনাদের ভাল লাগবে। যদি যবের ছাতুর উপকারিতা নিয়ে লেখা আর্টিকেল টি আপনাদের বুঝতে সমস্যা হয় তা হলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। আর চাইলে এই পোস্ট টি শেয়ার করে দিতে পারেন বন্ধহু বান্ধব এর কাছে।

1 thought on “যবের ছাতুর উপকারিতা ও ছাতু বানানোর নিয়ম শিখে নিন”

Leave a Comment