মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা ও বিচির দাম সহ খাওয়ার নিয়ম জানুন

সবাইকে স্বাগত জানিয়ে আজ মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আজকের পুরো পোস্ট টিতে কুমড়ার বিচির উপকারিতা ও মিষ্টি কুমড়ার বীজের দাম নিয়ে আলোচনা করবো। তাই আপনি যদি মিষ্টি কুমড়ার বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার আগ্রহী হয়ে থাকেন। তাহলে পুরো পোস্ট টি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম সহ মিষ্টি কুমড়ার বিচি (বীজ) এর পুষ্টি গুণাগুণ নিয়েই আজকের আলোচনা।

শরীরের এনার্জি ধরে রাখতে কিংবা সুস্থ রাখতে পুষ্টিগুণে ভরপূর মিষ্টি কুমড়া। মিষ্টি কুমড়া যেমন পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ তেমনি এর বীজ ও। বাজারের সব থেকে সহজলভ্য একটি সবজি হল মিষ্টি কুমড়া। কিন্তু অনেকেই জানেন না এর বিচি তে কি পরিমাণ পুষ্টি গুনাগুণ রয়েছে। তাই অনেকেই এটি না খেয়ে ফেলে দেন। তাই তাদের জন্য মিষ্টি কুমড়ার বিচির উপকারিতা সহ এর পুষ্টি গুণাগুণ ও খাওয়ার নিয়ম তুলে ধরছি। আশা করছি আপনাদের কাছে আর্টিকেল টি ভাল লাগবে। আর সবাইকে পুরো পোস্ট টি মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরধ রইল।

মিষ্টি কুমড়ার বীজের পুষ্টি গুণাগুণ

মিষ্টি কুমড়ার মতই এর বিচি তে পুষ্টি গুনে ভরপুর। মিষ্টি কুমড়াতে ভিটামিন এ থাকলেও এর বিচিতে রয়েছে ভিটামিন বি। পুষ্টিবিদ দের মতে, মিষ্টি কুমড়াকে পাওয়ার হাউস বলা হয়ে থাকে। এর পুরো অংশ ই খাওয়া যায়। শাক, কাঁচা মিষ্টি কুমড়া কিংবা কুমড়ার বিচি যাই বলেন না কেন সবই পুষ্টি গুন সমৃদ্ধ। এতে ভিটামিন বি, ম্যাগনেশিয়াম, প্রোটিন ও আয়রন রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। যা নিয়মিত খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ওজন কমায়, চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে প্রায় ৫৬০ ক্যালরি পাওয়া যায় যা খুবই উপকারি। মিষ্টি কুমড়ার বীজের আরও কিছু পুষ্টি উপাদান জেনে নিন।

প্রতি ৩৪.৫০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়া বীজে আছে: শক্তি- ১৮৬.৬৫ ক্যালরী, , আয়রন ৫.১৬ মিঃগ্রাম,  ভিটামিন কে ১৭.৭৩ মিঃগ্রাম, জিংক ২.৫৭ মিঃগ্রাম, প্রোটিন ৮.৮৭, ম্যাঙ্গানিজ ১.০৪ মিঃগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম- ১৮৪.৫৮ মিঃগ্রাম, ফসফরাস ৪০৫.০৩ মিঃগ্রাম, ট্রিপটোফেন ১১০ মিঃগ্রাম ও অন্যান্য উপাদান বিদ্যমান।

মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা

অনেকেই মিষ্টি কুমড়ার বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে নেট দুনিয়ায় খুঁজে থাকেন। আপনি জেনে অবাক হবেন যে মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা মিষ্টি কুমড়ার চেয়ে বেশি। মিষ্টি কুমড়াকে অনেকেই পাওয়ার হাউস বলে থাকেন আবার ভারতের ডি কে পাবলিশিং হাউসের একটি বই তে মিষ্টি কুমড়ার বিচি (বীজ) কে হিলিংস ফুড বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক মিষ্টি কুমড়ার বিচির উপকারিতা সমূহ।

১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ মিষ্টি কুমড়ার বিচি তে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সেই সাথে ভাইরাস এর সংক্রমণের প্রভাব ও কমিয়ে দেয়।

২) ক্ষুধা নিবারণেঃ মিষ্টি কুমড়ার বীজের প্রায় ৩০ শতাংশই ফ্যাটি এসিড। ফ্যাটি এসিড খারাপ কলেস্টোরেল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া প্রতি ১০ গ্রাম কুমড়ার বিচি তে প্রায় ৫৬ ক্যালরি পাওয়া যায়। যা শক্তি বৃদ্ধি ও ক্ষুধা নিবারনে ভুমিকা রাখে।

৩) ভাল ঘুম পেটে মিষ্টি কুমড়ার বিচিঃ কুমড়ার বীজে রয়েছে সেরোটোনিন নামক উপাদান যাকে প্রাকৃতিক ঘুমের বড়ি বলা হয়ে থাকে। সেরোটোনিন মানব দেহের ঘুম কে নিশ্চিত করে ও ভাল ঘুম হতে সাহায্য করে।

৪) উচ্চ রক্ত চাপ কমাতেঃ প্রতি ১০০ গ্রাম কুমড়ার বীজে ৭৮৮ মিঃ গ্রাম পটাশিয়াম রয়েছে। যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে। তাছাড়া এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স রক্ষায় ভুমিকা রাখে।

৫) বাতের ব্যাথায় কুমড়ার বিচিঃ মানুষের শরীরের চর্বি গুলো ভেঙ্গে গিয়ে হারের সংযোগ স্থলে জমা হয়। ফলে তা ব্যাথার কারণ হয়ে দাড়ায়। এই ব্যাথাকেই আমরা বাতের ব্যাথা বলি। মিষ্টি কুমড়ার বীজে থাকা পুষ্টি উপাদান সমূহ ভেঙ্গে যাওয়া চর্বি কে জমা হতে বাধা দেয়। ফলে বাতের ব্যাথা কম অনুভুত হয়। এটি প্রাকৃতিক উপাদান বলে এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

মিষ্টি কুমড়ার বিচি খাওয়ার উপকারিতা

কুমড়ার বিচির উপকারিতা প্রচুর পরিমাণে। ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর মিষ্টি কুমড়ার বিচি। প্রোটিন, ম্যাংগানিজ, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস সহ অনেক স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে। যা শরীরের জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয়। জেনে নিন কোন মিষ্টি কুমড়ার বিচি কি কি উপকারে লাগে মানুষের শরীরের জন্য।

  1. মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে থাকা জিংক হাড়ের ক্ষয় রোধে ভুমিকা রাখে।
  2. পাকস্থলী, ফুসফুস, ব্রেস্ট, কোলন ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় মিষ্টি কুমড়ার বিচি।
  3. মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট, ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা হৃদ যন্ত্রের জন্য কার্যকরী।
  4. এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যাদের হাই প্রেসার তাদের জন্য অনেক উপকারি।
  5. শরিরে থাকা এনজাইম পরিচালনা করে জিংক। যা প্রজনন ক্ষমতাকে কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।
  6. হাড়ের জয়েন্ট এর ব্যথা নিবারনে এর তেল বেশ উপকারি।
  7. আঁশ জাতীয় খাবার হওয়ায় সহজে হজম হয়না। ফলে খুদা কম লাগে ও ওজন কম থাকে।
  8. এতে থাকা আয়রন রক্ত কণিকা গঠন ও পেশি কে মজবুত করে। ফলে দেহ শক্তিশালী ও সবল হয়।
  9. মিষ্টি কুমড়ার বীজে ডাই হাইেড্রো এপি এন্ড্রোসটেনেডিয়ন নামের উপাদান থাকে, যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  10. অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে থাকা প্রোটিন ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রন করে বলে ডায়বেটিক্স নিয়ন্ত্রনে থাকে।

মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম

অনেকেই জানতে চান মিষ্টি কুমড়ার বীজ কিভাবে খাব কিংবা কুমড়ার বীজ কি সরাসরি খাওয়া যাবে? ভাল উপকার পেতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম কিছু নিয়ম রয়েছে। তবে ভাল ফলাফল পেতে অবশ্যই পাকা মিষ্টি কুমড়ার বিচি খাওয়া উত্তম। আসুন জেনে নেওয়া যাক মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার নিয়ম সমূহ।

  1. কাঁচা হিসেবে খেতে পারেন কিংবা একটু টেলে নিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
  2. কুমড়োর বিচি দিয়ে কেক, স্যুপ ও সালাদ ইত্যাদি বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
  3. পাকা কুমড়া থেকে বিচি আলাদা করে ধুইয়ে নিতে পারেন। এর পর সেগুলো রোদে শুকিয়ে পরে ভেজে খেতে পারেন। তবে তেল ছাড়া ভাজা ভালো
  4. বিস্কুট, সালাদ, স্যুপ, পাস্তা কিংবা বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন।
  5. ভাজি করে কাঁচের বয়ামে রেখে দীর্ঘদিন ধরে সরক্ষন করে খেতে পারবেন।
  6. আজকাল বাজারে ছেলানো কুমড়া বিচি পাওয়া যায়। সেগুলা কিনে এনে বিভিন্ন ভাবেই খেতে পারবেন।
  7. বিচি গুঁড়া করে আটার সাথে মিশিয়ে রুটি বানাতে পারেন।
  8. শুকনো বিচি আধা ভাঙা করে স্যুপের ওপর ছড়িয়ে দিতে পারেন।
  9. কাঁচা মিষ্টি কুমড়ার বিচি ভর্তা করে খাওয়া বেশ মজাদার।

মিষ্টি কুমড়ার বিচির দাম

মিষ্টি কুমড়ার বিচি এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই যারা এই মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানে তারাই কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে। তাই বিভিন্ন ভাবে মিষ্টি কুমড়ার বিচির দাম জানার চেষ্টা করে থাকেন। এক কেজি পরিশোধিত মিষ্টি কুমড়ার বিচির দাম ১০০০ থেকে ১২০০ টা হয়ে থাকে। তবে মিষ্টি কুমড়ার বীজের দাম ক্ষেত ও জায়গা বেধে তারতম্য হতে পারে। আর এটি দেশের যে কোন কাঁচা বাজার বা কনফেকশনারি দোকানে পাওয়া যেতে পারে।

অবশেষে

আজকের আর্টিকেল টিতে আমরা মিষ্টি কুমড়ার বীজের উপকারিতা ও বিচির দাম সহ খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। মূলত পুষ্টি গুণে ভরপুর এর কুমড়ার বিচির উপকারিতা রয়েছে অনেক। যা আমরা আপনাদের মাঝে আলোচনা করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এই পোস্ট টি আপনাদের কাছে অনেক ভাল লাগবে। কেমন লেগেছে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment